প্রশাসনে দলীয়করণ: রুহুল কবির রিজভীর গুরুতর অভিযোগ নোয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র...
প্রশাসনে দলীয়করণ: রুহুল কবির রিজভীর গুরুতর
অভিযোগ
নোয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব **রুহুল কবির রিজভী** দাবি করেন যে, প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে জামায়াত-শিবির বা ইসলামপন্থি ও দলমতানুসারী ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার মতে, প্রশাসনে নিরপেক্ষতা নষ্ট হলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।
রিজভীর আরও যুক্তি, যারা ছাত্রজীবন থেকেই শিবির বা ইসলামপন্থী কার্যক্রমে যুক্ত ছিল, তাদেরকে ক্যাডার সার্ভিসে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যদি তারা সংগঠনের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া বজায় রাখে, তবে প্রশাসন কার্যকরভাবে একটি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
প্রধান অভিযোগ ও বিশ্লেষণ
১. মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নিয়োগ ঘিরে সন্দেহ
রিজভীর দাবি করেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি জামায়াত-শিবিরের প্রভাবের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বিশেষভাবে মোহলেসুর রহমান নামের এক কর্মকর্তার কথা উল্লেখ করেন, যিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে দায়িত্ব পালন করেছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এই কর্মকর্তা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে মিথ্যা মামলা সাজানোর প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন।
২. ছাত্রদলপন্থি অফিসারদের প্রতিবন্ধকতা
রিজভী অভিযোগ করেন, ছাত্রদল ব্যাকগ্রাউন্ডের যোগ্য অফিসারদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ না দিয়ে বাধা দেওয়া হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি জাকির হোসেন ও আব্দুর রউফের নাম উল্লেখ করেন। তাদেরকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দিয়ে দায়িত্বহীন ক্ষেত্রে পাঠানো হয়েছে। তার প্রশ্ন—কেন ছাত্রদলপন্থি দক্ষ কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে শিবিরঘেঁষা কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে?
৩. অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ
তার মতে, প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দলীয় পক্ষপাতিত্ব প্রবল থাকলে কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ ও ন্যায্যভাবে পরিচালিত হবে না। তার ভাষায়—
“যেকোনো জায়গায় যদি আমরা দলীয় মতাদর্শের ক্যাডারকে প্রতিষ্ঠিত করি, তারা কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে না—প্রশাসনই করবে।”
প্রেক্ষিত ও রাজনৈতিক প্রভাব
রিজভীরের এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহু দিনের একটি আলোচিত বিষয়—প্রশাসনে দলীয়করণ। তিনি দাবি করেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে (১৯৯১–৯৬, ২০০১–২০০৬) বিসিএস পরীক্ষায় কোনো কারচুপি বা দলীয়করণের অভিযোগ ছিল না। তখন প্রশাসন তুলনামূলক স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছে।
কিন্তু গত ১৬–১৭ বছরে প্রশাসনে দলীয়করণের প্রবণতা ক্রমশ তীব্র হয়েছে। সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষও এর সাক্ষী। রিজভীর মতে, এর ফলেই রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে। তিনি আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, গার্মেন্টস সেক্টরে উত্তেজনা, পার্বত্য এলাকায় অশান্তি—এসবই একটি বৃহৎ “মাস্টার প্ল্যানের” অংশ হতে পারে।
বিশ্লেষণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি
- নিরপেক্ষ প্রশাসন জরুরি: একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রশাসন নিরপেক্ষ না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
- অভিযোগের প্রমাণ প্রয়োজন: এ ধরনের গুরুতর অভিযোগের জন্য নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা জরুরি।
- জনমত ও প্রতিক্রিয়া: এই বিতর্কে জনগণ, গণমাধ্যম ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
- তদন্তের দাবি: প্রশাসনে দলীয়করণের অভিযোগ সত্য হলে এর বিরুদ্ধে কার্যকর তদন্ত প্রয়োজন—তা সংসদীয় কমিটি, মানবাধিকার সংস্থা বা বিচার বিভাগের মাধ্যমে হতে পারে।
উপসংহার
রুহুল কবির রিজভীর অভিযোগ প্রশাসন ও নির্বাচন ব্যবস্থার স্বচ্ছতার প্রশ্নে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রশাসনে দলীয় পক্ষপাতিত্ব সত্যিই যদি থেকে থাকে, তবে তা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের জন্য বড় হুমকি হতে পারে। তবে এই আলোচনার জায়গায় শুধু অভিযোগ নয়—প্রমাণ, তদন্ত ও সংস্কার উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে।
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"