Page Nav

HIDE

Breaking News:

latest

চাকরি নয়, উদ্যোক্তা হোন” — ইউনূস বলছেন এটাই ভবিষ্যত

  বাংলাদেশে উদ্যোক্তা হওয়া শুধু একটি কারিগরি বিষয় বা ব্যবসার ধারণা নয়—এটি একটি দৃষ্টিভঙ্গার পরিবর্তন যা রাষ্ট্র, প্রযুক্তি ও ব্যক্তি স্বকীয়ত...

 

চাকরি নয়, উদ্যোক্তা হোন” — ইউনূস বলছেন এটাই ভবিষ্যত


বাংলাদেশে উদ্যোক্তা হওয়া শুধু একটি কারিগরি বিষয় বা ব্যবসার ধারণা নয়—এটি একটি দৃষ্টিভঙ্গার পরিবর্তন যা রাষ্ট্র, প্রযুক্তি ও ব্যক্তি স্বকীয়তার সঙ্গে যুক্ত। এই মর্মার্থে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি বলেছেন, মানুষ “চাকরির জন্য” নয়, “উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য” জন্মগ্রহণ করেছে।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ভবন–২ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই বিষয় তুলে ধরেন। ইউনূস মরণশীল চাকরি-সংস্কৃতি থেকে মনোরথ বিকাশের দিকে এগোলেই ব্যক্তি ও জাতির প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে তার বিশ্বাস।


মূল বক্তব্য ও বিশ্লেষণ

  1. চাকরি বনাম উদ্যোক্তা মানসিকতা
    অধ্যাপক ইউনূস মনে করেন, বর্তমান সমজে মানুষ চাকরি খুঁজে পেতে বেশি উৎসাহী, তবে সৃজনশীল ও উদ্যোগগত কাজগুলোর প্রতি উৎসাহ তুলনামূলক কম। তিনি বলছেন, প্রতিটি মানুষকে তার সক্ষমতা অনুযায়ী যেখানে যেতে চায়, উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ মিলতে হবে — শুধু চাকরির জন্য নির্ধারণ নয়।

  2. প্রযুক্তির ভূমিকা
    তিনি উল্লেখ করেন প্রযুক্তির উন্নয়নে উদ্ভাবনের পথ প্রশস্ত হয়েছে। “প্রযুক্তি আমাদেরকে সমস্ত কাজে একেবারে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছে”—এই কথাটি শুধু উদ্ভাবন নয়, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও অনলাইন উপায়ে অর্থোপার্জনের সুযোগও সৃষ্টি করছে।

  3. সংস্কার এবং সুযোগ সৃষ্টি
    পিকেএসএফ-এর নতুন ভবন শুধু একটি অবকাঠামো নয়, এটি নতুন যাত্রার প্রতীক হিসেবে কাজ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। যেখানে ব্যক্তি নিজের দক্ষতা ও স্বপ্ন অনুযায়ী কাজ শুরু করতে পারবে। এমন সুযোগ সৃষ্টি করলে দেশি উদ্যোগ বাড়বে ও সৃজনশীলতা বিকাশ পাবে।

  4. ব্যক্তিগত ও জাতির উন্নয়ন
    উদ্যোক্তা মনোভাব কেবল ব্যক্তি উন্নয়নের নয়, জাতীয় উন্নয়নেরও মূল চাবিকাঠি হতে পারে। উদ্যোক্তা হলে নির্ভরশীলতার চাহিদা কমে আসে, নতুন উদ্ভাবন বাড়ে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য গড়ে ওঠে।


সংক্ষিপ্ত জীবনী: অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

  • পরিচয় ও শিক্ষা

  • অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস একজন অর্থনীতিবিদ, উদ্ভাবক এবং সোসাল বিজনেস প্রবর্তক। তিনি বিশেষভাবে ক্ষুদ্রঋণ (microcredit) ও গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বের কাছে পরিচিত। বাংলাদেশে গ্রামীণ উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে তার অবদান অমর।

  • প্রধান কাজ ও অবদান

  • গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দারিদ্র্য সংক্রান্ত মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের পথ তৈরি করেছেন।

  • ঋণ, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, সামাজিক ব্যবসা, নারী ক্ষমতায়ন ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাঁর নেতৃত্বে বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে।

  • আন্তর্জাতিক মর্যাদা

  • নোবেল শান্তি পুরস্কারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন, যেমন আন্তর্জাতিক শান্তি ও উন্নয়ন সংক্রান্ত পুরস্কার।

  • বর্তমান দায়িত্ব

  • শিক্ষাব্যবস্থা, সামাজিক উদ্যোক্তা উদ্যোগ ও দারিদ্র্য হ্রাসকাজে সক্রিয়; পিকেএসএফ-এর মতো সহযোগী সংস্থা ও ভবিষ্যতের উদ্ভাবনমূলক কাজগুলোর পক্ষে কাজ করছেন।


ভূমিকা: দৃষ্টিভঙ্গার পরিবর্তন প্রয়োজন


চাকরি করা কি একমাত্র সাফল্যের সূচক? বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক কথাবার্তায় প্রায়শই এই প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। বর্তমান সময়ে যেখানে প্রযুক্তি ও ডিজিটাল মাধ্যম মানুষকে নতুন সুযোগে যুক্ত করছে, তখন শুধু চাকরির পেছনে ছুটে চলা কি যথেষ্ট? অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মনে করেন—না, মানুষের জন্ম হয়েছে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য।


উদ্যোক্তা হয়েই প্রগতির চাকা দ্রুত ঘোরা যাবে; ব্যক্তি শুধু আয় করবেন না, পরিবর্তন আনবেন, নতুন উদ্ভাবন আনবেন, ও সমাজকে আরও শক্তিশালী করবেন। পিকেএসএফ-এর নতুন ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই বার্তা তিনি দিয়েছেন স্পষ্টভাবে।


উদ্যোক্তা মানসিকতার অবদান


উদ্যোক্তা মানে শুধুই ব্যবসায় শুরু করা নয়; মানসিকতার বিষয়। উদ্যোক্তা মানসিকতা হলো—স্বপ্ন দেখা, উদ্যোগ চালু করা, সমস্যা সমাধানে নিজেকে প্রয়োগ করা।


প্রযুক্তির যুগে এটি আরও সহজ হবে: অনলাইন মার্কেট, ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল প্রোডাক্ট বা সার্ভিস, সামাজিক ব্যবসা—সবগুলোই উদ্যোক্তা মনোভাবের বিকাশে সহায়ক। অধ্যাপক ইউনূস বলছেন, “প্রযুক্তি আমাদের কাজকে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করেছে”—এই যুক্তি যে কতটা শক্তিশালী, আজকের যুব সমাজে কি তারা সেই সুযোগ নিচ্ছে, সেটি প্রশ্ন।


সুযোগ ও বাধাসমূহ


অবশ্য উদ্যোক্তা হওয়া সবসময়েই চ্যালেঞ্জবহ। অর্থ উপার্জন, বাজারে প্রবেশ, দক্ষতা ও পুঁজির অভাব, নীতি ও আইনগত বাধা, এবং প্রতিযোগিতা সবগুলোই বড় সমস্যা।


বাংলাদেশে সরকারি ভাষ্য, সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা ও শিক্ষাগত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ না করলে, এই বাধা দূর করা কঠিন। পিকেএসএফ-র কাজ এই র‍ূপরেখায় গুরুত্বপূর্ণ: নতুন অবকাঠামো, প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করে উদ্যোক্তাদের পেছনে দাঁড়াচ্ছে।


ভবিষ্যতের দিকে পরিকল্পনা


যেকোনো পরিবর্তন শুরু হয় চিন্তা থেকে। একজন ব্যক্তি যদি উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, জীবন যাপন ও উদ্দেশ্যে সেই রূপরেখায় চলেন, তবে ফলাফল আসে ধীরে ধীরে।


জাতীয়ভাবে, নীতি পরিবর্তন, শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। পিকেএসএফ-র নতুন ভবন যেন শুধু ঘর হয় না; সেখানে প্রশিক্ষণ দেয়ার আয়োজন, উৎসাহ দেয়ার স্পেস এবং উদ্যোক্তা পরিচর্যা কেন্দ্র হবে।


উপসংহার


অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মানুষ শুধুই চাকরির জন্য জন্মায়নি—তারা বড় কিছু করার জন্য, নতুন কিছু শুরু করার জন্য এসেছে। উদ্যোক্তা হওয়া মানে শুধু নিজেকে উন্নত করা নয়, সমাজ ও দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়া। চান কি না, আমাদের উচিত সেই সুযোগ গড়ে তোলা যেন, উদ্যোক্তা হয়ে স্বপ্ন দেখার সুযোগ যেন সবাই পায়।






সবার আগে পেতে Follow করুন:

" আঁধার আলো নিউজ গুগল নিউজ"

" আঁধার আলো নিউজ টুইটার "

" আঁধার আলো নিউজ ফেসবুক

"আঁধার আলো নিউজ পিন্টারেস্ট ;

" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"

" আঁধার আলো নিউজ লিংকডইন "