Page Nav

HIDE

Breaking News:

latest

বাজেট কী এবং কীভাবে দেওয়া হয় জানেন কি?

  বাজেট কীভাবে তৈরি হয়, কেন এটি এবার ব্যতিক্রম? আপনি কি জানেন বাজেট কী এবং এটি কীভাবে ঘোষণা করা হয়? প্রতিবারের মতো এবারও সরকার নতুন অর্থবছরে...

 

বাজেট কী এবং কীভাবে দেওয়া হয় জানেন কি?

বাজেট কীভাবে তৈরি হয়, কেন এটি এবার ব্যতিক্রম?


আপনি কি জানেন বাজেট কী এবং এটি কীভাবে ঘোষণা করা হয়? প্রতিবারের মতো এবারও সরকার নতুন অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে, তবে এবারের প্রক্রিয়াটি কিছুটা আলাদা। আসন্ন সোমবার একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাজেট ঘোষণা হবে, যা সাধারণ নিয়মের বাইরে গিয়ে হবে একটি বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে।


সাধারণত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন ও অনুমোদনের মাধ্যমে পাস হয়। কিন্তু বর্তমানে দেশে কোনো সংসদ নেই। রাজনৈতিক উত্তাল পরিস্থিতি ও গণআন্দোলনের প্রেক্ষিতে পূর্ববর্তী সরকার সরে দাঁড়ালে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ফলে সংসদীয় প্রক্রিয়ার পরিবর্তে এবারের বাজেট ঘোষণা ও অনুমোদন হবে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে।


অর্থ উপদেষ্টা বাংলাদেশ টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে বাজেট বক্তব্য দেবেন। সংসদ না থাকায়, এবারের বাজেটকে আনুষ্ঠানিকভাবে পাস করার জন্য বিকল্প প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিল—একটি হলো **ব্যয় নির্দিষ্টকরণ বিল** (সরকারি খরচের অনুমোদন), আর অন্যটি **অর্থবিল** (কর ও রাজস্ব সংক্রান্ত প্রস্তাব)—এগুলো সাধারণত সংসদে পেশ হয় এবং আলোচনা শেষে আইনে পরিণত হয়। এবার এই প্রক্রিয়া হবে মতামত গ্রহণ ও উপদেষ্টা পরিষদের মাধ্যমে।


জনগণের মতামত সংগ্রহের পর জুন মাসের শেষ দিকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর চূড়ান্ত বাজেট অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে।


বাজেট নিয়ে মানুষের আগ্রহ সবসময় বেশি। বিশেষ করে কর সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে। কোন পণ্যের দাম বাড়বে, কোনটা কমবে, নতুন কর আরোপ হবে কি না—এসব তথ্য জানার জন্য করদাতাসহ সবাই অপেক্ষা করেন। ব্যক্তিগত আয়করদাতারা বাজেট ঘিরে নতুন কর কাঠামো নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন থাকেন।


মূলত বাজেট একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরের জন্য সরকারের আয় ও ব্যয়ের পরিকল্পনা। ব্যক্তি যেমন নিজের আয় ও ব্যয়ের জন্য পরিকল্পনা করেন, তেমনি রাষ্ট্রও করে। যখন আয় ব্যয়ের চেয়ে কম হয়, তখন রাষ্ট্র ঋণ নেয়—নিজের নাগরিকদের কাছ থেকেও, আবার আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিদেশি সরকার থেকেও। পরবর্তীতে এই ঋণ পরিশোধ করা হয় ভবিষ্যতের আয় থেকে।


সরকার জনগণের কাছ থেকেই রাজস্ব আদায় করে, এবং সেই অর্থ জনগণের কল্যাণে ব্যয় করে। এইভাবে বাজেট রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক রূপরেখা নির্ধারণ করে, এবং একটি বছরের জন্য দেশের দিকনির্দেশনা প্রদান করে। এবারের বাজেট যে ভিন্নধর্মী হবে, তা শুধু পদ্ধতিগত নয়—সম্ভবত আর্থ-রাজনৈতিক দিক থেকেও।


বাজেট কেন প্রয়োজন?

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, সরকারকে প্রতি অর্থবছরের জন্য একটি বাজেট দিতে হয়। সংবিধানের ৮৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণে আয় ও ব্যয়ের একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনা, যা বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি নামে পরিচিত, তা প্রস্তুত ও উপস্থাপন করতে হবে। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে এই বিবৃতিকে ‘বাজেট’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাজেট বছরের সংজ্ঞায় অর্থবছর বোঝায়, যার সময়কাল শুরু হয় ১ জুলাই থেকে এবং শেষ হয় পরবর্তী বছরের ৩০ জুনে। ২০০৯ সালে কার্যকর হওয়া বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন এই পুরো প্রক্রিয়াকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসে।


বাজেট তৈরি হয় যেভাবে

প্রতিটি বাজেটের খসড়া তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। তারা অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রস্তাবনা সংগ্রহ করে। জানুয়ারিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো তাদের পরবর্তী বছরের ব্যয় পরিকল্পনা জমা দেয়। এরপর মার্চে এসব তথ্য পর্যালোচনা করে অর্থ মন্ত্রণালয় সংশোধিত বাজেট (চলতি অর্থবছরের জন্য) এবং নতুন বাজেটের প্রাথমিক খসড়া চূড়ান্ত করে। বাজেট পেশের সময় সরকার চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও সংসদে উপস্থাপন করে।


মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো কী?

বাংলাদেশে বাজেট পরিকল্পনা শুধু এক বছরের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো (MTBF) তিন বছরের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করে। এর মধ্যে প্রথম বছরকে ধরা হয় আসন্ন অর্থবছর, আর বাকি দুই বছর নিয়ে হয় আগাম প্রক্ষেপণ, যা পরে বাস্তবতার ভিত্তিতে পরিবর্তন হতে পারে।


এই কাঠামোর অংশ হিসেবে তৈরি হয় মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি, যেখানে সরকারের কৌশলগত লক্ষ্য, রাজস্ব আদায়ের কৌশল, ব্যয় ও ঋণ ব্যবস্থাপনার রূপরেখা এবং সামষ্টিক অর্থনীতির ঝুঁকির মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়।


বাজেট প্রাক্কলন: আয়-ব্যয়ের হিসাব

বাজেট প্রাক্কলন হলো একটি অর্থবছরে সরকার কোথা থেকে কত আয় করতে পারে এবং কীভাবে সেই অর্থ ব্যয় করবে, তার আনুমানিক হিসাব। বাজেট সাধারণত দুটি ভাগে বিভক্ত:


  • পরিচালন বাজেট – নিয়মিত প্রশাসনিক ব্যয়।
  • উন্নয়ন বাজেট – মূলত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)।


বাংলাদেশের বাজেটে প্রায়ই ঘাটতি থাকে। অর্থাৎ, সরকারের ব্যয় পরিকল্পনা আয় থেকে বেশি হয়। এই ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার ঋণ নেয়—দেশীয় উৎস যেমন ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র এবং বিদেশি উৎস থেকে। সঞ্চয়পত্রে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে, যার বিপরীতে সরকার মুনাফা প্রদান করে।


সম্পূরক বাজেট: অতিরিক্ত বরাদ্দের হিসাব

যদি কোনো মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দের তুলনায় বেশি ব্যয়ের প্রয়োজন হয়, তবে তা সম্পূরক বাজেট আকারে সংসদে উপস্থাপন করতে হয়। বাজেট ঘোষণার সময় অর্থবছর পুরোপুরি শেষ না হলেও, মে মাস পর্যন্ত ব্যয়ের ধারা দেখে অনেক সময় অনুমান করা যায়—অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন হবে কি না।


পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট পাসের সময় সংসদে এই সম্পূরক বাজেটও পাস করা হয়। তবে বরাদ্দের চেয়ে কম খরচ হলে নতুন অনুমোদনের দরকার হয় না।


বাজেট বক্তৃতা: সরকারের বার্তা

অর্থমন্ত্রী বা অর্থ উপদেষ্টা বাজেট ঘোষণার সময় একটি বিস্তারিত বক্তৃতা দেন, যেটিকে বাজেট বক্তৃতা বলা হয়। এটি দুটি অংশে বিভক্ত থাকে:


প্রথম অংশে – দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চিত্র, বিগত বছরের অর্জন, বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও সরকারের কৌশল তুলে ধরা হয়।


দ্বিতীয় অংশে – কর সংক্রান্ত প্রস্তাব বা অর্থবিল উপস্থাপন করা হয়, যা করদাতা ও সাধারণ মানুষের জন্য সরাসরি প্রভাব ফেলে।






সবার আগে পেতে Follow করুন:

" আঁধার আলো নিউজ গুগল নিউজ"

" আঁধার আলো নিউজ টুইটার "

" আঁধার আলো নিউজ ফেসবুক

"আঁধার আলো নিউজ পিন্টারেস্ট ;

" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"

" আঁধার আলো নিউজ লিংকডইন "