Page Nav

HIDE

Breaking News:

latest

প্রতিটি মায়ের জন্য শ্রদ্ধা । আজ বিশ্ব মা দিবস

  আজ বিশ্ব মা দিবস—একটি বিশেষ দিন, যার মধ্য দিয়ে মায়েদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানানো হয়। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবা...

 

প্রতিটি মায়ের জন্য শ্রদ্ধা । আজ বিশ্ব মা দিবস

আজ বিশ্ব মা দিবস—একটি বিশেষ দিন, যার মধ্য দিয়ে মায়েদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানানো হয়। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারে পালিত হয় এই দিনটি। যদিও এর সূচনা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে, সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে দিবসটি উদ্‌যাপিত হয় নানা আয়োজনে।


তবে বাস্তবে, মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন পড়ে না। প্রতিটি দিনই হওয়া উচিত মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর। মা—যিনি দশ মাসের কষ্ট আর অনন্ত ভালোবাসায় সন্তানকে পৃথিবীতে আনেন, নিজের সব আনন্দ-চাওয়া বিসর্জন দিয়ে সন্তানের জন্য নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে উজাড় করে দেন—তিনি সত্যিই একজন শ্রদ্ধার্ঘ।


মা ও সন্তানের আত্মিক সম্পর্ক চিরন্তন। এই অমোঘ সম্পর্কের আবেগ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য সাহিত্যকর্ম—গান, কবিতা, গল্প ও উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যেও মাকে নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক কালজয়ী কবিতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের *মনে পড়া*, শামসুর রাহমানের *কখনো আমার মাকে*, হুমায়ুন আজাদের *আমাদের মা*, আল মাহমুদের *নোলক*, কিংবা কালিদাসের *মাতৃভক্তি*—প্রত্যেকটি রচনায় প্রতিফলিত হয়েছে মায়ের প্রতি অন্তহীন ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।



পৃথিবীর ইতিহাসের প্রতিটি যুগেই এবং প্রতিটি ধর্মেই মায়ের স্থান রাখা হয়েছে শ্রদ্ধার সর্বোচ্চ আসনে। ইসলাম ধর্মেও মায়ের মর্যাদা অপরিসীম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, *“আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট করে তাকে গর্ভে ধারণ করে এবং দুই বছরে তাকে দুধ ছাড়ানো হয়। সুতরাং আমার এবং তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।


মজার বিষয় হলো, বিশ্বের নানা ভাষায় ‘মা’ শব্দটির উচ্চারণেও রয়েছে বিস্ময়কর মিল। প্রায় সব ভাষাতেই ‘মা’ ডাকের শুরু হয় ‘ম’ বা ‘এম’ ধ্বনিতে। যেমন, জার্মানে *মুটার*, ওলন্দাজে *মোয়েডার*, ইতালীয়ানে *মাদ্রে*, চীনে *মামা*, প্রাচীন মিশরে *মাত*, সোয়াহিলিতে *মামা*, আর আমাদের বাংলা ও হিন্দিতেও *মা*।


এই মিল কাকতালীয় নাকি গভীর কোনো ভাষাতাত্ত্বিক কারণ আছে—এ নিয়ে বহু আলোচনার বিষয়। ভাষাবিদ রোমান জ্যাকবসনের মতে, শিশু যখন মায়ের স্তন্যপান করে, তখন মুখভর্তি অবস্থায় যে শব্দ করে, তা নাক দিয়ে বেরিয়ে আসে এবং সেই ধ্বনি ‘ম’-এর কাছাকাছি শোনায়। ফলে ‘মা’ শব্দের ভিত্তিতে প্রায় সব ভাষায়ই ‘ম’ ধ্বনি ব্যবহার হয়ে এসেছে।


ইংরেজি ভাষায় ‘মা’ বলতে ব্যবহৃত ‘মম’ শব্দটির মূল রূপ ‘মাম্মা’। এটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ *মাম্মা* থেকে, যার অর্থ ‘স্তন’। এখান থেকেই এসেছে ‘ম্যামেল’ শব্দ, যা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।


এইভাবে ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির ভিন্নতা সত্ত্বেও মা–কে ঘিরে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও আবেগের প্রকাশ সবখানেই একান্তই সাধারণ ও গভীর।


মা দিবসের সূচনা যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে এক সমাজসচেতন নারী, জুলিয়া ওয়ার্ড হোই-এর হাত ধরে। ১৮৭০ সালে, গৃহযুদ্ধকালীন সময় শান্তির আকাঙ্ক্ষায় তিনি রচনা করেন একটি ঐতিহাসিক প্রস্তাবনা—*মাদারস ডে প্রোক্লেমেশন* নামে পরিচিত এ ঘোষণায় তিনি নারীদের সমাজ ও রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।


এরপর যুদ্ধের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে এবং পরিবারহীন শিশুদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন আরেক সমাজকর্মী, অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস এবং তাঁর কন্যা আনা মেরি জার্ভিস। তারা মিলে জুলিয়ার ভাবনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে মা দিবস পালনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু ১৯০৫ সালের ৫ মে, অ্যান মারা যান। মায়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আনা তখন দায়িত্ব নেন এ আয়োজনকে আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়ার।


১৯০৮ সালে আনা মেরি জার্ভিস তাঁর মায়ের স্মৃতিতে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় বিশেষ আয়োজন করেন। যদিও সে বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে সরকারি স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়নি, আনা দমে যাননি। তাঁর প্রচেষ্টা ধীরে ধীরে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে সাড়া ফেলতে থাকে।


শেষমেশ, ১৯১৪ সালে আনার নিরলস পরিশ্রম ফলবতী হয়। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে *মা দিবস* হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন এবং দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবে নির্ধারণ করেন। এরপর থেকে বিশ্বের বহু দেশ এই দিনটিকেই মায়েদের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন হিসেবে পালন করতে শুরু করে


মা দিবসের এই যাত্রা কেবল একটি দিনে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি মায়ের প্রতি ভালবাসা ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার এক শক্তিশালী বার্তা।






সবার আগে পেতে Follow করুন:

" আঁধার আলো নিউজ গুগল নিউজ"

" আঁধার আলো নিউজ টুইটার "

" আঁধার আলো নিউজ ফেসবুক

"আঁধার আলো নিউজ পিন্টারেস্ট ;

" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"

" আঁধার আলো নিউজ লিংকডইন "