সংস্কার শেষে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপি, প্রস্তুতির নির্দেশ তারেক রহমানের চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা তার আগেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ ...
সংস্কার শেষে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপি, প্রস্তুতির নির্দেশ তারেক রহমানের
চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা তার আগেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় বিএনপি, তবে এর আগে ‘অত্যাবশ্যক সংস্কার’ সম্পন্ন করার শর্তে। এ লক্ষ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের এখন থেকেই নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সোমবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে টেলিভিশন ও গণমাধ্যমে নিয়মিত বক্তব্য দেওয়া দলীয় নেতা, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে যুক্ত হন তারেক রহমান। বৈঠকে অংশ নেন ৬২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি, যাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাদা দল’-এর নেতারাও।
বৈঠকে তারেক রহমান বলেন, দেশে একটি গণতান্ত্রিক ও প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য দ্রুত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অপরিহার্য। এজন্য চলমান সরকারের ওপর নির্বাচন আয়োজনের চাপ বাড়াতে হবে এবং রাজনৈতিক ভাষ্য ও বিশ্লেষণে সেই চাপ প্রতিফলিত হতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত একজন অংশগ্রহণকারী গণমাধ্যমকে বলেন, “তিনি (তারেক রহমান) স্পষ্ট করে বলেছেন—সংস্কার শেষ করেই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব। সেজন্য প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে।
এছাড়াও, গণমাধ্যমে কথা বলার সময় কীভাবে যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে, অস্থির পরিস্থিতিতে কোন ভাষা ব্যবহার করতে হবে—সে বিষয়েও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান।
বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, আলোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং কিছু উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ওঠা ‘দুর্নীতি’ নিয়েও আলোচনা হয়েছে, যা আগামী দিনে বিএনপির বক্তব্যে স্থান পাবে।
বক্তব্যে কড়া সমালোচনা তুলে ধরে নেতারা অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু উপদেষ্টা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। কোথাও সরকার ব্যর্থ হলে কিংবা কোনো অঘটন ঘটলে, তা আড়াল করতে পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে দায়ী করে অপপ্রচার চালানো হয়। মাত্র ৯ মাসে কয়েকজন উপদেষ্টা ও তাদের ঘনিষ্ঠরা যেভাবে সম্পদের মালিক হয়েছেন, তাতে প্রশ্ন উঠেছে—তারা আরও কিছুদিন ক্ষমতায় থাকলে দেশের পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
বক্তারা বলেন, সরকার সমর্থন পেলেও, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে দ্রুত চাপ বাড়াতে হবে, নইলে দেশের গণতন্ত্র ও রাজনীতির ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে।
এই পরিস্থিতিতে বৈঠকে উপস্থিতদের বিভিন্ন মন্তব্য ও উদ্বেগের প্রেক্ষিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে ডিসেম্বর কিংবা তার আগেই নির্বাচন সম্ভব। এ নিয়ে গণমাধ্যমে যুক্তিপূর্ণ আলোচনা এবং সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার তাগিদ দেন তিনি।
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে সম্প্রতি যে গুঞ্জন ছড়ায়, তা ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেক রাজনীতিক ও বিশ্লেষক মনে করেন, এখন ইউনূসকে সরানো হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। তারা বলেন, সংকট সমাধানে তাকে দায়িত্বে রেখেই নির্বাচন সম্পন্ন করা উচিত। পদত্যাগ করলে তা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, এমনটাই মত দিয়েছেন বিভিন্ন মহল।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসও পরিস্থিতি সামাল দিতে গত রবিবার রাজধানীর হেয়ার রোডে নিজ সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’য় দেশের একাধিক রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি আশ্বস্ত করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ বাড়ানো হবে না এবং তিনি নিজেও ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান না। নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী এপ্রিলের পর আর সময় বাড়ানো হবে না।
এর আগের দিন, শনিবার সন্ধ্যায় তিনি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও বৈঠকে বসেন।
বর্তমানে রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে মিয়ানমারের রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ তৈরি, চট্টগ্রাম বন্দরের একটি টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে হস্তান্তর, নির্বাচন রোডম্যাপ নিয়ে অনিশ্চয়তা, বিএনপির ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে শপথ না দেওয়ার জটিলতা এবং নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ একাধিক ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব ইস্যু অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্কের ফাটল আরও গভীর করছে।
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ গুগল নিউজ"
" আঁধার আলো নিউজ টুইটার "
" আঁধার আলো নিউজ ফেসবুক"
"আঁধার আলো নিউজ পিন্টারেস্ট ;
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"
" আঁধার আলো নিউজ লিংকডইন "