সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান বরাবরই অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তিনি গান ও কবিতার মাধ্যমে যেমন প্রতিবাদ জ...
সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান বরাবরই অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তিনি গান ও কবিতার মাধ্যমে যেমন প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তেমনি রাজপথেও অনেক সময়ই নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে। ছাত্র ও সাধারণ জনগণের আন্দোলন থেকে শুরু করে নানা সামাজিক ইস্যুতে তিনি ছিলেন সরব। সময় বদলালেও তাঁর প্রতিবাদী সত্তা বদলায়নি।
সাম্প্রতিক এক ফেসবুক পোস্টে আবারো নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন এই শিল্পী।
বুধবার (২৮ মে) দুপুর ১টার দিকে দেওয়া পোস্টে তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, সম্প্রতি ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলার কারণে এক সময়ের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল ভয়াবহ সংকটে পড়েছিল। আজ আওয়ামী লীগও প্রায় একই ধরনের পথ বেছে নিয়ে আরও গুরুতর ভুল করছে, যা অতীতের সেই দলের ভুলকেও যেন অতিক্রম করে গেছে।
তিনি বলেন, নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপির নেতারা—সার্জিস ও হাসনাতরা—প্রথম থেকেই তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন, যার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কারণ এতে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তিনি নিজে, অনেক কিছু স্পষ্টভাবে বুঝে নিতে পারছেন। তবে প্রশ্ন রেখেছেন, যারা জামায়াতকে পাশে রেখে রাজাকারের মুক্তির আনন্দ করে, তারা কীভাবে বিবেকবান মানুষের ভোট আশা করতে পারেন?
সায়ান আরও বলেন, “আমি একাত্তরের পরে জন্মেছি বলে কি জামায়াত বা আলবদরকে চিনি না? বীরাঙ্গনার যন্ত্রণাকে বুঝি না?” তাঁর মতে, বাংলাদেশের শিশুরাও আজ ইতিহাস না জেনেও জামায়াত ও তাদের আদর্শ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠছে।
এনসিপিকে কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ দলটি হয়তো বুঝতেই পারেনি—তাদের এই রাজনৈতিক অবস্থান তাদের বিচারবোধের অভাব প্রকাশ করে। তারা ‘নতুন দেশ’ গড়ার কথা বললেও, আসলে জামায়াতকে পাশে নিয়েই নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে। আরেকটি বিষয় হলো, তারা যেন আওয়ামী লীগ-বিরোধিতাকে একমাত্র মূলধারা হিসেবে বেছে নিয়েছে। কিন্তু দেশের চলমান অন্যায়-অবিচার নিয়ে তারা নিশ্চুপ। অথচ জামায়াত ও আলবদরের প্রতি তাদের আগ্রহ স্পষ্ট।
সবশেষে তিনি লেখেন, এই স্বচ্ছতা ভালো—কারণ এতে অন্তত মানুষ বুঝতে পারছে কারা আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে।
ফেসবুকে দেওয়া আরও একটি পোস্টে সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে অকপটভাবে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তিনি সবসময় নিজের রাজনৈতিক চিন্তাধারায় পরিবর্তনের পক্ষপাতী। আজ যাকে সঠিক মনে হচ্ছে, আগামীকাল দেশের মাটি ও মানুষের স্বার্থে তাকেই ছেড়ে দিতে দ্বিধা করেন না। তার ভাষায়, “আমার রাজনৈতিক বিশ্বাস খুবই নমনীয়—জলঘোলার মতো তরল। আর আমি চাই সেটা এমনই থাকুক।
তিনি স্মরণ করেন, গত জুলাইয়ে যখন নাহিদরা বুক চিতিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়েছিল, তখন তাদের প্রতি ছিল তার ভালোবাসা ও অকুণ্ঠ সমর্থন। তখন সেই সাহসিকতা, সেই দেশপ্রেম আর মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতাই ছিল তার কাছে সত্যিকারের রাজনৈতিক মানদণ্ড। “সেদিন ওদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই কোনোদিন অনুশোচনা হবে না, বরং আমি গর্বিত,” বলেন সায়ান।
তবে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও কিছু নেতিবাচক ঘটনায় তার দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে গেছে। বিগত কয়েক মাসে নতুন দলটির কিছু সদস্যের কর্মকাণ্ড তার কাছে গভীর হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে উল্লেখ করেন, “আজহারকে বেকসুর খালাস দেওয়ার ঘটনায় যখন এই দলের তরুণ নেতাকর্মীরা আনন্দ প্রকাশ করল, এমনকি কেউ কেউ প্রকাশ্যে সমর্থন জানাল—তখন আমি স্তম্ভিত হয়েছি। কেউ চুপ থাকেনি, কেউ প্রতিবাদ করেনি। একইভাবে, নাদিরা ইয়াসমিনের অন্যায়ভাবে বদলির ঘটনায়ও তাদের নীরবতা আমাকে কষ্ট দিয়েছে।
এই অবস্থান থেকেই তিনি ঘোষণা করেন, আজ থেকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এই নতুন দলটিকে প্রত্যাখ্যান করছেন। “এই সিদ্ধান্তই আমার বর্তমান রাজনীতি,” বলেন তিনি। “এই একটি সিদ্ধান্ত নিয়েই নিজের অশান্ত মনকে একটু শান্ত করতে পারছি।
তিনি আরও জানান, আসন্ন নির্বাচনে এনসিপি, জামায়াত বা তাদের মতো যেকোনো ‘সমমনা’ রাজনৈতিক দলকে তিনি কখনোই ভোট দেবেন না এবং অন্যদেরও আহ্বান জানাবেন, যেন তারা এদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখেন। “আমি একজন সাধারণ মানুষ, একা। কিন্তু এতটুকু করাই আমার দায়িত্ব,” জানান তিনি।
পোস্টের শেষাংশে ইংরেজিতে সায়ান বলেন, “I will never support NCP!” (আমি কখনো এনসিপিকে সমর্থন করব না!)
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"
%20is%20a%20Canadian%20model.jpg)
.jpg)