Page Nav

HIDE

Breaking News:

latest

বাংলাদেশে নিবন্ধিত কোম্পানি ও RJSC রাজস্ব আয় ২০২৫: পরিসংখ্যান, প্রবৃদ্ধি ও বিশ্লেষণ

  নিবন্ধিত কোম্পানির পরিসর ও প্রবৃদ্ধি ২০২৫ সালের **আগস্ট** মাস পর্যন্ত যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (RJSC)–এর ত...

 

বাংলাদেশে নিবন্ধিত কোম্পানি ও RJSC রাজস্ব আয় ২০২৫: পরিসংখ্যান, প্রবৃদ্ধি ও বিশ্লেষণ


নিবন্ধিত কোম্পানির পরিসর ও প্রবৃদ্ধি


২০২৫ সালের **আগস্ট** মাস পর্যন্ত যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (RJSC)–এর তথ্যানুসারে, দেশে মোট **৩,০৫,৫১৬টি** প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে — যেমন, পাবলিক লিমিটেড, প্রাইভেট লিমিটেড, বিদেশি লিয়াজোঁ অফিস, অংশীদারি ফার্ম, ট্রেড অর্গানাইজেশন, সোসাইটি ও এক ব্যক্তি কোম্পানি ইত্যাদি। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি সংখ্যা সবচেয়ে বড় অংশ দখল করে — মোট নিবন্ধিত কোম্পানির প্রায় **৭২ শতাংশ** বা প্রায় **২,২১,২৭৫টি** কোম্পানি একই শ্রেণীতে রয়েছে। 


পাবলিক লিমিটেড সংস্থার সংখ্যা বর্তমানে **৩,৭৭৭টি**, বিদেশি কোম্পানির লিয়াজোঁ অফিস **১,২৩৮টি**, অংশীদারি ফার্ম **৬১,২৯৬টি**, ট্রেড অর্গানাইজেশন **১,২১৬টি**, সোসাইটি **১৬,০১৫টি** এবং এক ব্যক্তি কোম্পানি **৬৯৯টি**।  এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির আধিপত্য এবং অন্যান্য ধরণের কোম্পানিগুলোর একটি বিস্তৃত পারস্পরিক মিশ্রণ রয়েছে।


রেকর্ড হিসেবে, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত নিবন্ধিত কোম্পানি, ফার্ম, সোসাইটি ইত্যাদির সংখ্যা ছিল **২১,৬০৮টি**, যা ১৯৮২ সালে বেড়ে দাঁড়ায় **৩৮,৯৪৯**, ২০০৯ সালে বৃদ্ধি পায় **১,৩২,৬৫৩**–এ।  অর্থাৎ সর্বোচ্চ গত এক দশকে এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণের বেশি হয়েছে — একটি উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি।


তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শুধু মাত্র **পরিমাণেই বৃদ্ধি নয়**, কোম্পানির স্ট্রাকচারে একটি পরিবর্তন লক্ষণীয় — প্রাইভেট সেক্টরের ঘনিষ্ঠ ভূমিকা বৃদ্ধি পাচ্ছে; নতুন উদ্যোগগুলোর অধিকাংশই প্রাইভেট কোম্পানির আকারে গঠিত হচ্ছে।


রাজস্ব আয় — রূপ, প্রবণতা ও চ্যালেঞ্জ


RJSC-র আয় মূলত তিন ধরনের থেকে আসে — **স্ট্যাম্প ডিউটি**, **ভ্যাট**, এবং **নন-ট্যাক্স রাজস্ব**। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের আগস্ট পর্যন্ত এই তিন খাত থেকে **৩৯ কোটি ৯৪ লাখ ২৯ হাজার ২৮৯ টাকা** রাজস্ব সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে নন-ট্যাক্স আয় দাঁড়িয়েছে **২৩ কোটি ৬ লাখ ৬ হাজার ৫৫২ টাকা**, স্ট্যাম্প ডিউটি **১৩ কোটি ৪২ লাখ ২৪ হাজার ২৪ টাকা**, এবং ভ্যাট থেকে **৩ কোটি ৪৫ লাখ ৯৮ হাজার ৭১৩ টাকা** আয় হয়েছে। 


তুলনামূলকভাবে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে RJSC এ রাজস্ব হয়েছে **২৪৩ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ২৩৬ টাকা**। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেই সংখ্যা ছিল **২৮৭ কোটি ২ লাখ ৭৭ হাজার ২১৫ টাকা**, ২০২২-২৩ সালে **২৭০ কোটি ৬১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৩৪ টাকা**, ২০২১-২২ এ **২৯৬ কোটি ৬০ লাখ ৭৩ হাজার ১০৩**, ২০২০-২১ এ **২১৫ কোটি ৫ লাখ ৩ হাজার ২৭৯ টাকা**, এবং ২০১৯-২০ এ **১৮২ কোটি ৯৯ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭৬** টাকা।  এই ধারা থেকে একটি স্পষ্ট চিত্র মিলছে — RJSC-র রাজস্ব আয় অমনোযোগে ওঠানামা করেছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটু অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।


এই আয়ের ওঠানামার পেছনে বেশ কিছু কারণ কাজ করে — কোম্পানি নিবন্ধন বৃদ্ধি হলেও কর কমিশন, অর্থনৈতিক পারফরমেন্স, বাজার পরিস্থিতি, আইনগত পরিবেশ ও পরিচালন খরচের পরিবর্তন। এছাড়া, অনেক নিবন্ধিত কোম্পানি কার্যকরভাবে কাজ করছে কি না, রিটার্ন দিচ্ছে কি না — এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ—RJSC ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।


উল্লেখযোগ্য একটি দিক হলো — অনেক কোম্পানি নিবন্ধন নিয়ে থাকলেও কার্যকরভাবে শুরু করা হয়নি, বা রিটার্ন দাখিল করছে না। এছাড়া, রাজস্ব সংগ্রহের কার্যকারিতা ও তথ্যভিত্তিক অডিট ও তদারকিতে ঘাটতি রয়েছে, যা রাজস্ব অপচয় ও ফাঁকি প্রবণতা বৃদ্ধি করতে পারে।


প্রসঙ্গ ও বিশ্লেষণ: শিক্ষণ ও সুপারিশ


উপরের পরিসংখ্যান ও প্রবণতা থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ করতে পারি:


নিবন্ধনের গুণগত মান ও যাচাই-বাছাই বৃদ্ধি


 কোম্পানি নিবন্ধনের পর কার্যকর রূপ দেওয়া হচ্ছে কি না, ঠিকানা সত্যি কি না, পরিচালন সংক্রান্ত তথ্য সঠিক কি না — এসব বিষয় এখনো পর্যাপ্তভাবে যাচাই করা হচ্ছে না। কিছু সাংবাদিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানিগুলি অনিয়মিতভাবে ঠিকানা ব্যবহার করছে বা কোনও অফিস নেই এমন ঠিকানায় নিবন্ধন করা হয়েছে। RJSC ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত — আরও প্রশস্ত এবং কার্যকর ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া চালু করা।


রিটার্ন ও কর আদায়ের নিয়ম কঠোরকরণ


 অনেক কোম্পানি আইন অনুযায়ী বার্ষিক রিটার্ন দায়িত্ব পালন করে না। এ কারণে রাজস্ব সম্ভাবনা অনেকটাই প্রায় অপচয় হয়। RJSC এবং NBR–এর সমন্বয়ে একটি স্বয়ংক্রিয় অনুস্মারক ও জরিমানা কাঠামো প্রণয়ন করা যেতে পারে, যাতে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক হয়।


রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন


 RJSC–র রাজস্ব ধারাবাহিকভাবে ওঠানামা করছে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য একত্রভাবে আরজেএসসি রাজস্ব নীতি পুনর্বিবেচনা করতে পারে — সংশ্লিষ্ট সার্ভিস ফি, অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়া এবং ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন প্রসেস আরও চালু ও উন্নত করা।


সচেতনতা ও প্রগতিশীল উদ্যোগ


 উদ্যোক্তারা অনেক সময় নিবন্ধনের জটিলতা, নিষ্ক্রিয়তা, অতিরিক্ত নিয়ম-নীতি ও খরচ ঠেকিয়েই নিবন্ধন থেকে পিছিয়ে থাকে। RJSC–এর পক্ষ থেকে সহজ গাইডলাইন, ওয়ার্কশপ, অনলাইন হেল্পডেস্ক, উদ্যোক্তা ক্লিনিক ইত্যাদি আয়োজন করা যেতে পারে যাতে কিছুটা “দুর্ভাবনা” কমে এবং অনেকে নিবন্ধনে আগ্রহী হয়।


ডেটা ও বিশ্লেষণ ভিত্তিক পরিকল্পনা

RJSC–র সংগৃহীত ডেটা (নিবন্ধন ধরণ, ভৌগলিক তথ্য, কাজ শুরু বা না করা কোম্পানি, রিটার্ন তথ্য) সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করলে, নতুন নীতি প্রণয়নে ও পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দে সহায়ক হবে। এছাড়া, বাজেট পর্যায়ে RJSC-এর নিজস্ব কার্যক্রমের জন্য উন্নত তথ্য-প্রযুক্তি (IT) ও অডিট টিম গঠন জরুরি।


উপসংহার


বাংলাদেশে নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা ও তাদের রাজস্ব আয় বিষয়ক তথ্য দেখিয়ে দেয় যে, সংখ্যাগত বৃদ্ধির প্রবণতা স্পষ্ট, কিন্তু গুণগত উন্নয়ন ও কার্যকর কর সংগ্রহে এখনো অনেক পথ যেতে হবে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির আধিক্য, রাজস্ব আয় ওঠানামা এবং রিটার্ন-সংক্রান্ত সমস্যাগুলো এই সেক্টরের কারিগরি ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে আসে।


আগামী বছরে RJSC ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উচিত হবে — নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে সর্বোচ্চ স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর করা, রিটার্ন ও কর আদায়ের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং উদ্যোক্তাদের জন্য নিবন্ধন ও পরিচালনা সহজ-সাধ্য করা। এভাবে শুধু মাত্র সংখ্যায় নয় — দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের গুণগত উন্নয়ন সম্ভব হবে এবং রাজস্ব সম্ভাবনাও অপরিসীম বৃদ্ধি পাবে।






সবার আগে পেতে Follow করুন:

" আঁধার আলো নিউজ গুগল নিউজ"

" আঁধার আলো নিউজ টুইটার "

" আঁধার আলো নিউজ ফেসবুক

"আঁধার আলো নিউজ পিন্টারেস্ট ;

" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"

" আঁধার আলো নিউজ লিংকডইন "