রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভারতীয়দের বাড়তি সুবিধা: দুদকের অনুসন্ধান ও অসম চুক্তির অভিযোগ বাংলাদেশের জ্বালানি খাত দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক ও সম...
রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভারতীয়দের বাড়তি সুবিধা:
দুদকের অনুসন্ধান ও অসম চুক্তির অভিযোগ
বাংলাদেশের জ্বালানি খাত দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগ নির্ভর বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোতে বারবার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সর্বশেষ আলোচনায় এসেছে বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। অভিযোগ উঠেছে, ভারতীয় কর্মকর্তারা একই পদে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের তুলনায় বহুগুণ বেশি বেতন-সুবিধা পাচ্ছেন। বিষয়টি এখন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর অনুসন্ধানে।
অভিযোগের মূল বিষয়বস্তু
-
বেতন বৈষম্য:
অভিযোগ অনুযায়ী, একজন বাংলাদেশি প্রকৌশলী যেখানে পান মাসে মাত্র ১ লাখ টাকা, সেখানে একই পদে কর্মরত একজন ভারতীয় প্রকৌশলী পাচ্ছেন প্রায় ২৫ লাখ টাকা। -
উচ্চপদে প্রাধান্য:
অভিযোগ আছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের উচ্চপদে মূলত ভারতীয়দের বসানো হয়েছে। -
বিশেষ ধর্মের লোকদের বাড়তি সুবিধা:
এ বিষয়েও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলা হয়েছে। -
নীতিমালার অসামঞ্জস্য:
যদিও এই প্রকল্পটি পরিচালিত হয় বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (BIFPCL) এর নীতিমালা অনুযায়ী, তবুও ভারতীয় কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হচ্ছে ভারতের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সংস্থা NTPC এর সুবিধা নীতিমালা।
দুদকের অনুসন্ধান
দুদক সূত্রে জানা যায়, আদালতের নির্দেশনার পর তাদের বাগেরহাট অফিস রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে অভিযান চালায়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা মেলে। ফলে এখন একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এখানে প্রশ্ন জাগে—একই প্রকল্পে একই পদে কর্মরত দুই দেশের কর্মকর্তার সুবিধায় এত বৈষম্য কেন? যদি এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে এটি শুধু চুক্তির বৈষম্য নয়, বরং বাংলাদেশি দক্ষ জনশক্তির প্রতি অবমূল্যায়ন।
রিট ও সালেকুজ্জামান সাগরের ভূমিকা
এই ইস্যুতে ২০২৫ সালের জুন মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী সালেকুজ্জামান সাগর। তার আবেদনের ভিত্তিতেই আদালত বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট পক্ষের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: সালেকুজ্জামান সাগর
- পরিচিতি: সালেকুজ্জামান সাগর বাংলাদেশের একজন তরুণ আইনজীবী।
- অবদান: জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা ইস্যুতে রিট করার জন্য তিনি পরিচিতি লাভ করেছেন।
- এই মামলায় ভূমিকা: রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভারতীয়দের বেতন বৈষম্য নিয়ে আদালতে রিট করে তিনি জনমত তৈরি করেন।
- ব্যক্তিত্ব: তিনি সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও বৈষম্য দূরীকরণে সোচ্চার একজন তরুণ আইনজ্ঞ হিসেবে সুনাম অর্জন করছেন।
বিশ্লেষণ
রামপাল প্রকল্প: এক আলোচিত যাত্রা
রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র শুরু থেকেই বিতর্কিত। পরিবেশবাদীরা শুরুতে বলেছিলেন, এটি সুন্দরবনের জন্য হুমকি। এরপর এল চুক্তি ও আর্থিক অস্পষ্টতা। এখন আবার বেতন ও সুবিধার বৈষম্যের অভিযোগ সামনে এসেছে।
বৈষম্যের প্রভাব
বাংলাদেশি প্রকৌশলীরা যখন একই কাজ করে কম বেতন পান, তখন তা হতাশা ও কর্মস্পৃহা হ্রাসের কারণ হয়। অন্যদিকে, বিদেশি কর্মীরা অতিরিক্ত সুবিধা পেলে তা এক ধরনের অবিচার এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হিসেবেও ধরা যায়।
কেন অনুসন্ধান জরুরি?
বাংলাদেশের প্রতিটি বিদ্যুৎ প্রকল্প দেশের অর্থনীতি ও জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত হয়। তাই এসব প্রকল্পে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা শুধু নৈতিক দায়িত্ব নয়, আইনি বাধ্যবাধকতাও বটে। দুদকের এই পদক্ষেপ সঠিক সময়ে নেওয়া একটি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ।
ভবিষ্যতের করণীয়
- স্বচ্ছ নীতিমালা: স্থানীয় ও বিদেশি কর্মকর্তাদের জন্য সমান বেতন কাঠামো তৈরি করতে হবে।
- চুক্তি পুনঃমূল্যায়ন: অসম বা বৈষম্যমূলক শর্তগুলো বাতিল করতে হবে।
- জাতীয় স্বার্থ রক্ষা: বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।
উপসংহার
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভারতীয় কর্মকর্তাদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা যদি সত্যিই প্রমাণিত হয়, তবে এটি শুধু এক প্রকল্প নয়—পুরো দেশের শ্রমবাজার ও অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা। সালেকুজ্জামান সাগরের উদ্যোগে আদালতের নির্দেশনা এবং দুদকের অনুসন্ধান আমাদের দেখাচ্ছে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করলে জাতীয় স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সবার আগে পেতে Follow করুন:
" আঁধার আলো নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে"